মধু রসমালাই | ভাইরাল তরমুজওয়ালা | ভাইরাল বাংলাদেশ

 ভাইরাল

ভাইরাল

ভাইরাল তরমুজওয়ালা: ‘মধু রসমালাই’ স্লোগানে সারা দেশ কাঁপানো সেই ব্যবসায়ীর গল্প!

কারওয়ান বাজারের এক কোণায় দাঁড়িয়ে এক তরুণ চিৎকার করে বলছে— "ওই কিরে! "ওই কিরে! মধু রসমালাই!" মধু রসমালাই!"

কেউ প্রথমে বুঝতেই পারছিল না এটা কোন দোকানের বিজ্ঞাপন, না কি মিষ্টির দোকান। পরে সবাই অবাক হয়ে জানতে পারল— এ যে এক সাধারণ তরমুজ বিক্রেতা, যার অনন্য ভঙ্গি ও স্লোগানে জমে উঠেছে পুরো বাজার!

এই তরুণের নাম মোহাম্মদ রনি। পেশায় একজন সাধারণ তরমুজ ব্যবসায়ী। কিন্তু তার অসাধারণ সেলিং স্টাইল, হাসিমাখা মুখ আর "মধু রসমালাই" বলে ডাকার কৌশল তাকে করে তোলে দেশের সবচেয়ে আলোচিত তরমুজওয়ালা। তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে তার দোকানে, কেউ ছবি তুলতে আসে, কেউ আসে ভিডিও বানাতে— কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় তখন, যখন এসব কৌতূহলী দর্শনার্থীর ভিড়ে প্রকৃত ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

---

ভাইরাল হওয়া কি আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ?

রনির গল্প এখানেই শেষ নয়। ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে বদলে যায় তার জীবন।

যেখানে সে আগে দিনে হাজার দশেক টাকার তরমুজ বিক্রি করত, সেখানে ভাইরাল হওয়ার পর লোকজন আসে হাসতে, খ্যাপাতে— কিনতে নয়।

ফলে এক সময় তার হাতে থেকে থেকে যায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ। তরমুজ নষ্ট হতে শুরু করে।

রনি হতাশ হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন,

“ভাই, ভাইরাল হইছি বুঝি, কিন্তু আমার ব্যবসা ডুবতেছে। আমি তো আর মজার মানুষ না, আমি একজন বিক্রেতা।”

---

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও আমাদের দায়িত্ব

এই ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়— সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল হওয়া যেমন কাউকে রাতারাতি পরিচিত করে তুলতে পারে, তেমনি সঠিক দিকনির্দেশনা ছাড়া তা হতে পারে এক কঠিন অভিশাপ।

আমাদের দায়িত্ব হলো, এসব সাধারণ মানুষকে ভাইরাল করে কেবল হাসাহাসি না করে, তাদের জীবন ও জীবিকার বাস্তবতাটাও বুঝা।

কন্টেন্ট না, মানুষকে দেখুন।

রনির মতো মানুষরা হাসিমুখে আমাদের বাজারে এনে দেয় মিষ্টি তরমুজ। তাদের হাসি যেন আমাদের লোভের কারণে না মুছে যায়।

---

আশার আলো: তার পাশে দাঁড়িয়েছে সমাজ

এই সময়েই রনির পাশে দাঁড়ান অনেক সেলিব্রিটি ও সাধারণ মানুষ।

অভিনেতা শামীম হাসান সরকার এক ভিডিও বার্তায় বলেন—

“এই রনি ভাইয়ের দোকানে গিয়ে একটা তরমুজ কিনুন, ছবি তোলেন না, ভিডিও করেন না। মানুষটা ব্যবসা করতে পারছে না, আপনার একটা হাসির ভিডিওর কারণে।”

অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ চালু করে— #SaveTheMelonSeller।

মানুষ এগিয়ে আসে, তরমুজ কিনে রনিকে সাহায্য করতে থাকে। এক সময় তিনি আবার ব্যবসায় ফিরতে সক্ষম হন।

---

কিছু বক্তব্য: ভাইরাল না, বেঁচে থাকার লড়াই

রনির গল্প একটা উদাহরণ। ভাইরাল হওয়া ভালো, কিন্তু তার মূল্য অনেক বেশি।

তার হাসিমাখা মুখ আর মিষ্টি স্লোগান এখনো আমাদের কানে বাজে—

"মধু রসমালাই... এই নেন ভাই! মিষ্টি তরমুজ!"

আসুন, আমরা কনটেন্টের পেছনে ছুটে তাদের জীবনকে পুড়িয়ে না দিই।

ভাইরাল করার আগে ভাবি— এই মানুষটার জীবনটা কি এতে ভালো হবে?

---

লেখা:  [মতিউর রহমান লিটন]

সূত্র: বাস্তব ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণ